মানুষ তার জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র ব্যবহার করে থাকে। আর মানুষের জীবনের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র কিন্তু একজন মানুষের কাছে থাকে না। এর জন্য একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ একজন আরেকজনের কাছে দারস্থ হতে হয়। আর যার পরিপ্রেক্ষিতে আগে একজন মানুষ তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যেকোনো জিনিস অন্যের কাছ থেকে নিতে গেলে অন্য কিছুর বিনিময়ে নিতো। পরবর্তীতে এই বিনিময়ের বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে হওয়ে আসতে আসতে এক পর্যায়ে মুদ্রার আবিষ্কার হয় এবং এর মাধ্যমেই পরবর্তীতে বিনিময় পদ্ধতি চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সকল দেশের নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিটি দেশে উক্ত মুদ্রার মাধ্যমে জিনিসপত্রের একে অপরের সাথে জিনিসপত্রের বিনিময় করে থাকে। আমাদের দেশ বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই বিষয়। আমাদের দেশেও এই বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার প্রচলন রয়েছে। আর এই মুদ্রার নাম টাকা যা আমরা সকলেই জানি। তো এই টাকার শুরুটা আসলে কিভাবে হলো সেটাই নিয়েই আমার আজকের এই টপিক।
টাকার ইতিহাসঃ
১৯৭১ সাল বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের পর তখন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ আমাদের। এমনকি নিজেদের কোন টাকাও ছিল না সুতরাং তখনো পাকিস্তানের টাকায় আমাদের এই নব্য গঠিত বাংলাদেশর অর্থনীতি চলত। তখন পাকিস্তানের টাকার উপর অর্থাৎ যেগুলো বাংলাদেশর ব্যাংকে ছিলো সেগুলোর উপর রাবার স্ট্যাম্প দিয়ে বাংলাদেশ সিল দেয়া থাকতো।
যার মাধ্যমে উক্ত পাকিস্তানি টাকার আমাদের দেশে প্রচলণ ছিলো। আসলে তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা বর্তমান সময়ের মত এতো জটিল ছিল না। তাই এই টাকাই আমাদের দেশের অর্থনীতি চলতো। বলে রাখা ভালো তখন কিন্তু শুধু পাকিস্তানি টাকাই আমাদের দেশে চলতো না এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান টাকারও আমাদের দেশে প্রচলণ ছিলো। তো একটি স্বাধীন দেশে বিদেশী দুই দেশী টাকার প্রচলণ ছিলো নিজেদের কোনো টাকা ছিলোনা। আর তখনই তৎকালীন বাংলাদেশের সরকার নিজস্ব টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিলো।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বোম্বাইয়ের কাছাকাছি নাসিক নামক একটা জায়গা থাকা
সিকিউরিটি প্রেস থেকে ১ টাকা এবং ১০০ টাকার
নোট ছাপিয়ে আনা হয়। আর এই দুইটিই ছিলো বাংলাদেশের একদম প্রথম টাকার নোট।
নিজস্ব টাকাতো ছাপানো হলো কিন্তু সমস্যা আরেক জায়গায় দাঁড়ালো। সেটি হলো এই দুইটি টাকার কোনো সিকিউরিটি সিস্টেম ছিলো না। যার কারণে যেকোনো মুহুর্তে এই টাকার জাল নোট বের হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তাই তৎকালীন সরকার ইংলেন্ডের একটি সিকিউরিটি প্রেসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলো এবং এরই ধারাবাহিকতায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে আমাদের দেশীয় শিল্পীর মাধ্যমে এই টাকার ডিজাইন বা নকশা করা হবে।
আর তাই এই দায়িত্ব দেওয়া হয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পটুয়া কামরুল হাসান, শিল্পী কে.জি মুস্তাফা, শিল্পী কাইম চৌধুরী ও শিক্ষাবিদ নীলিমা ইব্রাহিম
কে। কামরুল হাসানের পরামর্শে শিল্পী কে.জি মুস্তাফা সর্বপ্রথম এক টাকার নোটের দুটি
নকশা তৈরি করেন।
পরবর্তীতে নতুন ডিজাইনের
নিজস্ব টাকা চালু হলো পহেলা মার্চ ১৯৭৩ সালে। নিজস্ব টাকা চালু হওয়ার পরও তখনো পাকিস্তানী
এবং ভারতীয় টাকার প্রচলন ছিল বাংলাদেশে। আর তাই বাংলা টাকা চালু হওয়ার ঠিক একদিন পর
সরকারীভাবে অচল ঘোষণা হলো পুরনো পাকিস্তানি আর ভারতীয় মুদ্রাকে। সবাই তখন তাদের কাছে
থাকা পাকিস্তানি এবং ভারতীয় টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে বিনিময়ে পেলেন বাংলাদেশের নিজের
টাকা। এরপর থেকে টাকার নানা বিবর্তন হয়েছে, বিভিন্ন মূল্যমানের নোট ছাপানো হয়েছে।
বলে রাখা ভালো টাকার শুরু থেকে কিন্তু বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাকার মধ্যে স্থান পেয়েছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যা করার পর নোটের উপর থেকে মুছে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধুর ছবি। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর তার ছবি আবারও স্থান পায় টাকার নোটে।
শুধু তাই নয় নোটের উপর আরো শোভা পায় সুন্দরবনের হরিণ, জাতীয় পাখি দোয়েল, লালবাগকেল্লা, সুপ্রিম কোর্ট, স্মৃতি সৌধ, সংসদ ভবন, জাতীয় মসজিদ, বাগেরহাটের সাত গম্বুজ মসজিদ এবং শিল্পাচার্য জয়নুল
আবেদীনের বিখ্যাত গরু দিয়ে হালচাষের পেইন্টিং। এছাড়াও আরও অনেককিছুই বাংলাদেশী টাকার নোটের উপর শোভা পেয়েছে যা আপনারা অনেকেই দেখেছেন।
প্রথমত কাগজের টাকার নোট ছাপানো হয়। পরবর্তীতে পলিমারের টাকাও ছাপানো হয়েছিল ২০০০ সালে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় ছাপানো এই টাকার নোট তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি।
দেশে প্রচলিত টাকার বাইরে বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করতে ছাপানো হয়েছে বিশেষ ধরনের বেশকিছু নোট। যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর উপলক্ষে ছাপানো হয় ৪০ টাকার নোট। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ছাপানো হয়েছে বিশেষ নোট। এখন প্রশ্ন হলো এই যে এতো টাকা ছাপাানো হয় সেটা কিসের উপর ভিত্তি করে বা চাইলে কি এতো এতো টাকা চাপানো যায়।
আসলে বিষয়টা হলো বাংলাদেশ
ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট মূলত সিদ্ধান্ত
নেয় যে কত টাকা তৈরি করতে হবে। আর তখন তারা
বাংলাদেশের টাকা প্রস্তুতকারক সংস্থা টাকশালকে ওয়ার্ক অর্ডার টা পাঠিয়ে দেয়
এবং তখন তারা প্রিন্টিং শুরু করে দেয়। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস
এ টাকশাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে কাগজে টাকা ছাপানোর যাত্রা শুরু হয়। তার আগ পর্যন্ত
টাকা ছাপা হত ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড,
জার্মানি সহ আরো কয়েকটি দেশে।
তবে দেশের টাকা তৈরিতে অধিকাংশ কাঁচামাল এবং সব ধাতব মুদ্রা এখনও বিদেশ থেকেই আমদানি
করতে হয়।
টাকার ভবিষ্যৎঃ
আমরা যা কিছুই করি
না কেন তাতে কিন্তু টাকা লাগবেই। আর টাকা বহনেও আমরা জানি বেশ ঝুঁকি থাকে। আর তাই বর্তমান
সময়ে এসে আমরা যদি লক্ষ্য করি ডিজিটালের সাথে তাল মিলিয়ে টাকার ব্যবস্থাটা এখন ডিজিটাল
পদ্ধতিতে হয়ে গিয়েছে। তাই এখন টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার বিষয়। বর্তমানে বেশিরভাগ
দেশেই এখন ক্যাশ টাকার লেনদেন প্রায় বন্ধ। টাকার জায়গা নিতে প্রথমে এসেছে প্লাস্টিক
কার্ড। এর পরে এলো ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেসবকে ছাপিয়ে এখন মোবাইলের মাধ্যমে। মোবাইল
ব্যাংকিং হওয়ার পর দিনে রাতে ২৪ ঘন্টা যেকোনো জায়গায় টাকা পাঠানো এখন মুহুর্তের ব্যাপার
মাত্র। বর্তমানে এই সেবার মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ করার দোকান বা মুদিখানা থেকে সুপার
সপ কিংবা অনলাইনে কেনাকাটা, রাইড শেয়ার,
ডেলিভারি সেবার পেমেন্টও ঘরে
বসে পেমেন্ট করা যায়।
তাছাড়া ঘরে বসে যে
কোন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, স্কুল-কলেজের ফি দেয়া,
যেকোনো যাত্রার টিকেট কেনা,
বেতন, রেমিট্যান্স, সরকারি বৃত্তি, ভাতা, অনুদান গ্রহণ, ব্যাংকের সাথে লেনদেন,
লোন, সেভিংস, স্কিম গ্রহণ এর মত আর্থিক লেনদেন সবই হচ্ছে বিকাশের
মতো অন্যান্য মোবাইল আর্থিক সেবা দিয়ে। আর মানুষের এই মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেনের অভ্যস্ততায় প্রশ্ন
জাগে ক্যাশ টাকার লেনদেনের ভবিষ্যৎ কি হবে।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
সৌজন্যে : বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক টিউটোরিয়াল সাইট - www.TutorialBD71.blogspot.com নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পেতে সাইটটিতে সবসময় ভিজিট করুন।
0 comments:
Post a Comment