বাংলাদেশ, ভারত ও চীনসহ আরও অনেক দেশে ভাত একটি প্রধান খাদ্য। শুধু প্রধান খাদ্যই নয় এইসব অঞ্চলে বা দেশে এটি একটি প্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। আমরা বাঙ্গালিরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যাইনা কেন আমাদের ভাত খেতেই হয়। অন্যথায় আমাদের ক্ষুদা নিবারণ হয় না। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে লক্ষ্য করলেই আপনি বুঝতে পারবেন। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে নিয়মিত ভাত খাওয়া কী পুষ্টিকর বা স্বাস্থ্যের জন্য কী ক্ষতিকর। ভাতের কী কী উপাদান থাকে পুষ্টিবিদরা কী বলছেন? এইরকম বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিয়েই মূলত আমাদের আজকের এই টপিক।
ভাতঃ
ভাত সাধারণত রান্নার মাধ্যমে চাল থেকে হয়ে থাকে। যাকে এই জন্য একধরনের শস্যজাতীয় খাবার বলা হয়ে থাকে। যা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার প্রধান উৎস। বিশ্বের অর্ধেক মানুষ কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা মেটাতে ভাত খেয়ে থাকেন। সাদা চালে শ্যসের উপরে থাকা পুষ্টি সমৃদ্ধ আঁশের আবরণ তুলে ফেলা হয়। এতে চাল বেশিদিন টিকে এবং রান্নাও হয় দ্রুত। তবে এই আঁশ তুলে ফেলার কারণে সাদা ভাতে পুষ্টিগুণ কমে যায়। এর বিপরীতে আঁশ জাতীয় বাদামি চালে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে এবং এটির তুলনামূলক স্বাদও বেশি হয়।
সাদা চালের ভাত এবং বাদামি চালের ভাত এই দুটির মাঝে পুষ্টিগত দিক থেকে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যা বুঝতে উপরের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করুন।
ভাত নিয়ে ৭টি তথ্যঃ
আমরা ইতিমধ্যে ভাত নিয়ে বেশকিছু বিষয় জেনেছি। এই ভাতের উপর আমরা আরও ৭টি তথ্য জানবো। আর এই তথ্যগুলো জানার জন্য অবশ্যই আপনাকে নিচের পয়েন্টগুলির দিকে ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে।
তথ্য নং-০১: ওজনের ক্ষেত্রে ভাতের ভূমিকাঃ
সাদা ভাতঃ কিছুকিছু গবেষণাতে লক্ষ্য করা হয়েছে যে সাদা ভাত ওজন বাড়াতে এবং পেটে চর্বি জমার কারণ হতে পারে। আবার কিছুকিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে সাদা ভাতের সাথে উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলির কোনো সম্পর্কই নেই। তবে নিয়মিত সাদা ভাত খেলে রক্তে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এরফলে ওজনও বেড়ে যেতে পারে।
বাদামি ভাতঃ আর বাদামি চালের ভাতে মধ্যে রয়েছে ফাইবার এবং প্রোটিন। বাদামি চালের ভাতে থাকা কার্বোহাইড্রেট সাদা ভাতের থেকে দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একারণে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায় ও ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এগুলি সবই শক্তি বাড়ায়, ক্ষুধা কমায় এবং ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
তথ্য নং-০২ : ডায়াবেটিস ও ভাতঃ
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে যারা নিয়মিত সাদা ভাত খেয়ে থাকেন তাদের ডায়াবেটিসের ঝুকি বাড়তে পারে। পুষ্টিবিদ তাসনিম হাসিন চৌধুরীর মতে, যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে তারা নিয়মিত দুইবেলা বাদামি ভাত নির্দিষ্ট পরিমাণ মতো খেতে পারবে। তবে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত তারা একবেলার বেশি ভাত না খাওয়াই ভালো। তাও সেটি হবে পরিমিত এবং বাদামি ভাত। ভাত খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়া যাবে না। কারণ ভাত খাওয়ার পর ভাত থেকে নিঃসরিত গ্লুকোজ দ্রুত আমাদের রক্তে মিশে যায়। তাই ঘুমাতে যাওয়ার প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ভাত খেয়ে নিতে হবে এবং কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যক্তির ওজন অনুযায়ী পুষ্টিবিদরা ভাত খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকেন।
তথ্য নং-০৩ : বাদামি ভাত চিরস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা করেঃ
বাদামি চালে থাকা ফ্লেবোনয়েড রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, এমনকি অগ্ন্যাশয় ও গ্যাস্ট্রিকসহ কয়েকধরণের ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে এই বাদামি ভাত সাহায্য করে বলে অসংখ্য গবেষণায় দেখা গিয়েছে।
তথ্য নং-০৪ : সাদা ভাত ও শক্তি সংরক্ষণঃ
অনেক অ্যাথলিটক তাদের শক্তি বাড়ানোর উৎস হিসেবে বিশেষ করে শারীরিক ব্যায়ামের পর সাদা ভাতকে বেছে নেন। কারণ সাদা ভাতে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে যা কায়িকশ্রমের পরে মাংসপেশির গ্লাইকোজোনের মাত্রা দ্রুত পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
তথ্য নং-০৫ : সাদা ভাত সহজপাচ্যঃ
সাদা ভাত সহজে হজম হয় এবং সঠিকভাবে রান্না করে খেলে গ্যাস্ট্রিকের আশংকার থাকে না। যারা বুকে জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব, বিশেষ করে পরিপাকতন্ত্রের জটিল রোগে ভুগছেন তাদের জন্য সাদা ভাত বেশি উপকারী।
তথ্য নং-০৬ : একটি গ্লু টেন মুক্ত শস্যঃ
ভাত প্রাকৃতিকভাবে গ্লু টেন মুক্ত হওয়ায় যারা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প। বিশেষ করে বাদামি ভাতে অদ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা হজমে সাহায্য করে অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটোরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়।
তথ্য নং-০৭ : ভাত ও আর্সেনিক দূষণঃ
ভাত খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ হলেও গবেষণায় বলছে এর থেকে আর্সেনিক দূষণ হতে পারে। এই আর্সেনিক বাদামি চালের আবরণে বেশি থাকে। আর্সেনিকের প্রভাবে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে থাকে শিশুরা। কিন্তু চাল রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিলে এবং বেশি পানিতে সেদ্ধ করলে আর্সেনিকের ঝুকি কাটানো সম্ভব। এছাড়াও প্রতিদিনের খাদ্যের তালিকায় ভাতের পাশাপাশি অন্যান্য সুষম খাবার খেলে সেটা উপকারে আসে।
সূত্র : বিবিসিগুডফুড।
0 comments:
Post a Comment